বাগেরহাট জেলার বৃহত্তম উপজেলা মোরেলগঞ্জ। ২০১৮ সালে মোরেলগঞ্জ সদর, হোগলাবুনিয়া, বারইখালী ও বলইবুনিয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে গঠন করা হয় মোরেলগঞ্জ পৌরসভা। সে অনুযায়ী এ পৌরসভার বয়স এখন প্রায় ২৭ বছর। তখন এটি ছিলো সি গ্রেডে। ২০১৮ সালে এটি এ গ্রেডের পৌরসভায় উন্নীত হয়। এখানে লোক সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। হোল্ডিং রয়েছে ৬ হাজার ৩২০টি।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ওই ২৭ বছরে পৌরসভার বাসিন্দারা ন্যূনতম নাগিরিক সুবিধা পাননি। নাগরিকদের নিকট থেকে পৌরসভা শুধু নিয়েছে। পৌর মেয়রের খামখেয়ালীপনার কারনে কর পরিশোধ করেননি প্রায় দুই তৃতীয়াংশ বাসিন্দা। ফলে প্রায় ৭০ লাখ টাকার কর বকেয়া পড়েছে। কর আদায়ের ব্যর্থতায় এখানে জনবল নিয়োগ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। উন্নয়ন বরাদ্দ কমেছে। কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে গ্রেড পতনসহ বাতিল হতে পারে কয়েকটি চলমান প্রকল্পের কাজও।
২০০১ সাল থেকে এখানে পৌর কর ধার্য করা হয়। সে থেকে এ পর্যন্ত কর বকেয়া পড়েছে ৭০ লাখ টাকার। বর্তমানে কর আদায়ের হার শতকরা ৩৭ ভাগ। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে শতকরা ৮৫ ভাগ কর আদায়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কর আদায় না হওয়ায় এর গ্রেড পতনসহ চলমান থাকা কয়েকটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চলতি অর্থ বছরে উন্নয়ন বরাদ্দও কমেছে। নতুন প্রকল্প প্রস্তাব গৃহীত হচ্ছেনা, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগও বন্ধ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাবার পানি সরবরাহ না থাকা, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকা, কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা ও খেয়াল খুশি মতো উচ্চ মাত্রায় কর নির্ধারণ করার কারণে ক্ষুব্ধ পৌরবাসীর কর বকেয়া পড়েছে। ২০০৪ সাল থেকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল হক তালুকদার এখানে একটানা ১৫ বছর মেয়র ছিলেন। কর নির্ধারণের বেলায় মেয়রের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতো শতভাগ। তার দল ও পছন্দের লোকদের কর নির্ধারণ হতো সর্বনিম্ন মাত্রায়। অন্যদের বেলায় হতো মাঝারি থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায়। এ কারণে অনেকের করের বোঝা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলেও তারা পরিশোধ করতে পারেননি। এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। বছরে ৬ মাস ডুবে থাকেন কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। নেই খাবার পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থাও।
চলতি বছরের মাঝামাঝি কয়েকটি সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সড়কবাতি স্থাপনের কাজও চলছে। ২০২৯ সালের মধ্যে এ পৌর সভায় প্রায় ১০০ কেটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবার কথা রয়েছে। তবে, সবকটি প্রকল্প শেষ করতে হলে পৌর কর ৮৫ শতাংশ আদায় হতে হবে। অন্যথায় কয়েকটি প্রকল্প মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় জানা গেছে। একই সাথে ‘এ’ গ্রেড থেকে অবনতি হয়ে ‘বি’ বা ‘সি’ গ্রেডে নেমে যেতে পারে এর মান।
এসব সমস্যার বিষয়ে পৌর প্রশাসক মোঃ হাবিবুল্লাহ দৈনিক খুলনা গেজেটকে বলেন, পৌরসভাটির মান ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কর বকেয়ার কারণে উন্নয়ন বরাদ্দ কমেছে। প্রকল্প আসছেনা। কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছেনা। এমন নানাবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে পৌরবাসীর বকেয়া কর পরিশোধ একটি জরুরি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
পৌর প্রশাসক আরও বলেন, পৌরসভাটির বর্তমান রুগ্ন চেহারা পাল্টাতে কিছুটা সময় লাগবে। উন্নয়নমূলক কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নিশ্চিত হবে কাক্সিক্ষত নাগরিক সুবিধা। তবে, এ ক্ষেত্রে কর পরিশোধসহ সবার সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম

